পাত্র - পক্ষ
বিদিশা বন্দ্যোপাধ্যায়
সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার আর সাথে গজরানি ,যেন ধোঁয়া রং মেঘের নিচে পড়ে হাঁসফাঁস করছে ।
কিন্তু নন্দিতার মুখে যেমন হাসি ,তেমনি সে কর্মব্যস্ত। যদিও নন্দিতা মোটেই কাজের পক্ষপাতি নয়, একটু আলসে প্রকৃতির ।
আজ কারণ টি অন্য, তার বন্ধুসম ননদকে পাত্রপক্ষের দেখতে আসার দিন । তাই সকাল থেকেই নন্দিতার কর্মচঞ্চলতা চোখে পড়ার মতন। নন্দিতার বিয়ে বেশিদিন হয়নি ,তবুও সে শ্বশুরবাড়িতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ননদ শ্রীরুপা র সাথে তার বয়সের পার্থক্য কম থাকায় বন্ধুত্ব বেশ খানিকটা গাড় হয়ে উঠেছে অল্প দিনেই।
শ্রীরুপা কে সুন্দরী বলা না গেলেও সে শিক্ষিতা, শিষ্টাচারী, মৃদুভাষী এবং সুশ্রী । পাত্র অয়নাংশু মুখোপাধ্যায়ের কথা ঘটক মুখে শোনা, বহু গুণের অধিকারী সে, তার উপর সে ভালো সরকারি চাকুরে। প্রাথমিক ধারণায় শ্রীরুপার সাথে বেশ মানানসই বলে মনে হয়েছিল ঘোশাল পরিবারের।
সারাদিন আনন্দে হাসি ঠাট্টায় দিন কাটলো। সন্ধ্যায় পাত্র-পক্ষ এসে উপস্থিত তাদের সম্ভাষণে ব্যস্ত নন্দিতার স্বামী, দেওর, শ্বশুর এবং রান্নাঘরে তাদের আপ্যায়নের তদারকিতে শাশুড়ি ব্যস্ত। শ্রীরুপা র সাথে আছে নন্দিতা, হঠাৎ ই একটি কথা নন্দিতার কানে গেল ...
পাত্র অর্থাৎ অয়নাংশু বলছেন ---
"শুনুন আমার তো কবেই বিয়ে হয়ে যেত ,
কেন এতদিন বিয়ে হলো না?
কেন এত বয়স বাড়ল আমার ,সেসব কথা খোলাখুলি ই আলোচনা করা উচিত । আমার জীবনটা যেন ঝুরঝুরে হয়ে গেছে।
পাত্রী-পক্ষের অভিভাবকরা কেন আমার সাথে বিয়ে দিতে চায় না ...
এইভাবে প্রায় তিন হাজার পাত্রী দেখা হয়ে গেছে আমার।"
অন্য একটি কন্ঠস্বর শোনা গেল ,
পাত্রের দাদা বলছেন
" আহা এখন থাম না, ওসব কথা না হয় পরে......"
নন্দিতার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো।
রাত্রে সবাই থমথমে মুখে খেতে বসেছে, মনটা সকলেরই খারাপ, মেজাজও বিগড়ে আছে। এর মধ্যে নন্দিতাই প্রথম কথা বলল, তাও আবার বেশ হাসি হাসি মুখে , দেওরকে সে বলল ---
" জানো তো বিজন তোমার দাদা দেখতে যাওয়ার আগে অয়নাংশু বাবু আমাকেও দেখতে গিয়েছিলেন আর ওই কথাগুলি বলে এসেছিলেন"
সকলে সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ একটি হাসির আলোড়ন এসে জমে থাকা কালো মেঘ সরিয়ে দিল।
°°°°°°°°
Comments
Post a Comment